অফিস থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে রফিক সাহেব প্রায়ই পথের ধারের দোকান থেকে ভাপা পিঠা কিনে নিয়ে যায়। তারপর সবাই মিলে খুব মজা করে সেই পিঠা খায়। আজও এর ব্যতিক্রম হবেনা। রফিক সাহেব সেই পুরনো পরিচিত দোকানটির পাশে এসে দাঁড়াল। আজ দোকানটা একটু ফাঁকা ফাঁকা। এখনো খুব একটা ভিড় জমেনি। একটু পরেই ভিড় জমে যাবে। তারপর সিরিয়াল দিয়ে পিঠা কিনতে হবে। দোকানে দুজন মানুষ বসে। স্বামী-স্ত্রী। তারা দুজনে পিঠা বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়। রফিক সাহেব দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালে দোকানির মুখে তৃপ্তির হাসির ফুটে উঠে। বলে
-স্যার আইজকা বেশী ভিড় নাই, আপনে হইলেন প্রথম কাস্টমার। বলেন স্যার কয়টা পিঠা দিমু। -দাও, গোটা দশেক পিঠা দাও
দোকানী পিঠা বানাতে শুরু করে। পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী মাটির চুলায় লাকরী ভরতে থাকে। চুলার আগুন জ্বলছে অনেকক্ষণ ধরেই। পানি গরম হচ্ছে, পানি থেকে ধোঁয়াও উঠছে। ধোঁয়ার মাঝে দোকানী আর তার স্ত্রীর মুখ দুটি কখনো অস্পষ্ট হয়ে যায় আবার কখনো স্পষ্ট হয়। দৃশ্যটি রফিক সাহেবের খুবই ভাল লাগে। দোকানি যখন পিঠা দেয় চুলায় তখন রফিক সাহের হঠাৎ কি যেন হয়, সে ফিরে যায় তার গ্রামে। গ্রামে শীতের সময় তার মা খুব ভোরে উঠে পিঠা বানাতো। তার জন্য তার আগের দিন সন্ধ্যায় চাল কোটা হতো। সেখানে পাশের বাড়ি থেকেও কয়েকজন মহিলাও আসতো। চাল কোটার দৃশ্যটা রফিক সাহেবের স্পষ্ট মনে পড়ে। সিয়া-কাহাইল দিয়ে চাল কোটা হয়। একজন চাল দেয় আরেকজন সিয়া দিয়ে চালের উপর জোড়ে আঘাত করে। এতে করে চাল গুড়ো হয়। এভাবে অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে চাল কোটা। সেও মাঝে মধ্যে দু-একবার সিয়া দিয়ে কাহাইলে আঘাত করতো। তবে তারটি খুব একটা ভাল হতোনা। মহিলারা কি সুন্দর করে আঘাত করতো। সকাল বেলা টিনের ছাউনি দেয়া রান্না-ঘরে বসে পিঠা বানানো হতো। রান্না ঘরের ফঁাঁক দিয়ে শীতল হাওয়া আসতো, চাদর মুরি দিয়ে রফিক সাহেব আর তার ছোট বোন খুব আয়েশ করে পিঠা খেতো। কতদিন ছোট বোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে এ নিয়ে। প্রথম পিঠাটা কে আগে খাবে। মা শেষ পর্যন্ত দুজনকে ভাগ করে দিতো। সেই স্বাধ আর সেই পরিবেশ এখন আর খুব একটা দেখা যায়না।
দোকানী পিঠা বানিয়ে একটা ঠোঙ্গায় ভড়ছে। বেশ কয়েকজন ক্রেতাও এর মধ্যে এসে গেছে। কয়েকজন রিকশাওয়ালা দোকানের পাশে রিকশা থামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। হয়তো তারা পিঠা খাবে। এখন ভাপা পিঠা কিনে খেতে হয়। রফিক সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে মা অনেক পিঠা বানাতো। তারপর সেই পিঠা আশে-পাশের প্রতিবেশীদের বাড়িতে রফিক সাহেব আর তার বোন দিয়ে আসতো। পিঠাগুলো দিয়ে আসতেও রফিক সাহেবের খুব ভাল লাগতো। হাটার সময় ঘাসের শিশির তার পায়ে জড়িয়ে থাকতো। শিশিরের ছোঁয়ায় তার পা ভিজে যেতো। ছোট বোনকে নিয়ে তার সেই পিঠা দিতে যাওয়া আর চুলার সামনে বসে পিঠা খাওয়া এ দুটি ঘটনা রফিক সাহেবের মনের মধ্যে একটা অন্যরকম আবহ তৈরী করে। তার খুব ইচ্ছে করে গ্রামে গিয়ে সেই চুলার পাশে বসে পিঠা খেতে। মা নেই, সেই পরিবেশও নেই। সেই গ্রামও নেই। গ্রামেও এখন মাটির চুলা খুব একটা দেখা যায়না। গ্যাস চলে গেছে, বিদু্যতের ছোঁয়া। সবকিছু ছাপিয়ে ভাপা পিঠা বানানোর পরিবেশ আর সৃষ্টি করা যাবেনা। তাই এই দোকান থেকে পিঠা নিয়ে ভাপা পিঠা খাওয়ার স্বাধ মেটাতে হবে। দোকানী হাক দেয় স্যার হইয়া গেছে। রফিক সাহেব পিঠার দাম দিয়ে রওনা দেয় বাড়িতে। গরম থাকতে থাকতেই পিঠাগুলো খেতে হবে।
বি: দ্র:-সিয়া-কাহাইল হচ্ছে আগে গ্রামে চাল গুড়া করার জন্য কাঠের তৈরী এই জিনিষ ব্যবহার হতো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া
আপনার গল্পটি পড়ে একটা মজার কথা মনে পড়ল ,,, আমার ছেলেকে নিয়ে একবার ২১ফেব্রুয়ারীর বই মেলায় গিয়েছিলাম, ফেরার পথে রাস্তার পাশের পিঠার দোকান থেকে ভাপা পিঠা কিনে খেয়েছিলাম, ঐটাই ছিল আমার ছেলের প্রথম বাইরে পিঠা খাওয়া, তো আমার ছেলে ভিষন অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল '' দোকানে পিঠা পাওয়া যায়?''
মিজানুর রহমান রানা
হাটার সময় ঘাসের শিশির তার পায়ে জড়িয়ে থাকতো। শিশিরের ছোঁয়ায় তার পা ভিজে যেতো। ছোট বোনকে নিয়ে তার সেই পিঠা দিতে যাওয়া আর চুলার সামনে বসে পিঠা খাওয়া এ দুটি ঘটনা রফিক সাহেবের মনের মধ্যে একটা অন্যরকম আবহ তৈরী করে। তার খুব ইচ্ছে করে গ্রামে গিয়ে সেই চুলার পাশে বসে পিঠা খেতে। ---------------গল্পটি বেশ চমৎকার। এমন সুন্দর গল্পের ভাবনার জন্য আপনার প্রতি শুভ কামনা।
প্রজ্ঞা মৌসুমী
মনে পড়ছে গুড়/ নারকেল দেয়া ভাপা পিঠা, আবার লাউ তরকারী দিয়ে খেতাম মিষ্টি-ছাড়া ভাপা পিঠা। আপনার লেখায় প্রাঞ্জলতা আছে। গ্রামবাংলা তো এক বিশাল ক্যানভাস; আপনি তার একটা অংশকে কেন্দ্র করে গল্প লিখলেন সুন্দরভাবে। শিশির, চুলা, বাড়িতে পিঠা দিয়ে আসা, সিয়া-কাহাইলের মত আরো নানা গ্রামীণ পরিবেশের বিষয় ভাপা পিঠাকে ঘির উঠে আসলে আরো বেশি খুশি হতাম। খুব সুন্দর বর্ণনা দিলেন যে আরো পড়ার লোভ হচ্ছিল। শুভ কামনা থাকলো
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।